পৃথিবীর সমস্ত মানুষ তাকিয়ে আছে ভয়াল করোনা ভাইরাসের হাত থেকে রক্ষা পাবার জন্য যে যার ধর্মের সৃর্ষ্টিকর্তা কর্তার দিকে, প্রার্থনা করছে এই করোনার হাত থেকে রক্ষা পাবার জন্য, সেই সময়ে আমরা দেখতে পাচ্ছি চীন-ভারতের অবস্থা।
আজকের প্রত্যেকটি টিভি চ্যালেনের খবরেই বলা হচ্ছে ভারতের ২০ জয়ানকে চীনের সৈন্যরা হত্যা করেছে,যদিও এর পূর্বে তা অস্বীকার করেছিল ভারত।
কিন্তু আমাদের প্রশ্ন কেন এই হত্যা দুই দেশের বডারের কাছে?
ডোকলাম নিয়ে দুমাসের বেশী হয়ে গেল ভারত আর চীনের মধ্যে বিরোধ চলছে। দুই দেশের সেনারা মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে, আর নেতারা গরম গরম বিবৃতি দিচ্ছেন।
ডোকলাম নিয়ে দুই দেশের সম্পর্ক প্রায় তলানিতে এসে ঠেকলেও ভারত-চীন সীমান্ত যে রকম নিশ্চুপ, সেটা পাকিস্তান আর ভারতের সীমান্তে দেখা যায় না।
সেখানে নিয়মিত গুলি বিনিময় হয় দুই দেশের বাহিনীর মধ্যে, মাঝে মাঝেই দুই দেশের সেনাসদস্যদের মৃত্যুও হয়।
কিন্তু ভারত-চীন সীমান্তে বড়জোর দুই বাহিনীর মধ্যে হাতাহাতি হয় – তার বেশী কিছু না।
দুই দেশের সঙ্গে দুই সীমান্তে কেন দুই চিত্র?
কারণ “দুটো দেশের মধ্যে এরকম সিদ্ধান্ত রয়েছে যে ফ্রন্ট লাইনে যেসব সেনা সদস্য মোতায়েন থাকবেন, তাঁদের কাছে কোনও রকম অস্ত্র থাকবে না। যদি সেনা র্যাঙ্ক অনুযায়ী কোনও অফিসারের কাছে আগ্নেয়াস্ত্র রাখা নিয়ম হয়, তাহলে তার নল মাটির দিকে ঘুরিয়ে রাখা থাকবে। সেজন্যই দুই দেশের সেনাসদস্যদের হাতাহাতি বা কুস্তি করার ভিডিও দেখা যায়, কোথাও গুলি বিনিময়ের ছবি দেখা যায় না। তবে পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের এরকম কোনও চুক্তি নেই।
ভারত আর চীনের সেনাদের মধ্যে যখন উত্তেজনা বেড়ে যায়, বা হাতাহাতির পর্যায়ে পৌঁছয়, সেইসময়েও কয়েকটা দিকে নজর রাখা হয়।
দুই দেশের সেনাদের মধ্যে হাতাহাতির যেসব ভিডিওতে দেখা যায় গণমাধ্যম বা সামাজিক মাধ্যমে, সেগুলো যদি কেউ খুঁটিয়ে দেখেন, তাহলেই বোঝা যাবে সৈনিকরা যেন বাচ্চাদের মতো কুস্তি লড়ছে।
একে অপরকে ধাক্কা দেয়, কেউ পড়ে গিয়ে আবার উঠে দাঁড়ায়। কিন্তু কেউ কাউকে চড়-থাপ্পড় মেরেছে, এটা দেখা যায় না। চড় মারা অপমান করার সামিল।
তাই ধাক্কাধাক্কির সময়েও কেউই হাত ব্যবহার করে না। নিজেদের রাগ নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্যই সেনা সদস্যরা এটা করে থাকেন।
অতীতে আমরা যদি দেখি চীন ও ভারতের চিত্র,সেখানে দেখতে পাবো,
“১৯৭৫ সালে শেষবার ভারত আর চীনের সেনাবাহিনীর মধ্যে গুলি চলেছিল। সেই ঘটনায় কোন পক্ষেরই কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয়নি, কিন্তু সেটার পুনরাবৃত্তি হয় নি। নিয়মিত সমঝোতা আর আলোচনার মাধ্যমেই লাইন অফ অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোলের সমস্যাগুলোকে দুই দেশই ব্যাক বার্ণারে ঠেলে দিয়েছে।”
১৯৯৩ সালে নরসিমহা রাও যখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, সেই সময়ে মেইন্টেন্যান্স অফ পিস এন্ড ট্র্যাঙ্কুয়েলিটি চুক্তিটি সাক্ষরিত হয়েছিল।
১৯৯৬ সালে আস্থা বর্ধক ব্যবস্থাপত্রে সই করে দুই দেশ। ২০০৩ আর ২০০৫ সালেও চুক্তি হয়েছে। আর ২০১৩ সালে সই হওয়া বর্ডার ডিফেন্স কোঅপারেশন এগ্রিমেন্টই এ বিষয়ে সর্বশেষ চুক্তি।
ভারত-চীনের মধ্যে সংযমের বাঁধ কি ভাঙ্গছে?
কিছুদিন আগে লাদাখে ভারত আর চীনা বাহিনীর মধ্যে কথিত পাথর ছোঁড়াছুঁড়ির একটা ঘটনা জানা গেছে। তার মানে কি দুই দেশের সৈন্যদের মধ্যে সংযমের বাঁধ ভাঙ্গছে।
আজ সময় এসেছে শান্তি স্থাপনের জন্য সকলকে সংযত হয়ে এই মহামারি করোনার হাত থেকে বাঁচার চেষ্টায় পরিচালিত হওয়া।
কিন্তু তা না করে যদি এভাবে দুই দেশ একে অপরের সাথে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়লে,এর ফয়দা নিতে চেষ্টা করবে অন্যান্য দেশ।
আজ এমন সময় অতিবাহিত করছি যখন যুদ্ধ নয় শান্তির প্রয়োজন।
প্রয়োজন একে অপরের পাশে থেকে সাহায্য করা,আর তা না করে ভারত-চীন তাদের এই অশান্তি সারা বিশ্বই চিন্তিত।
এই অশান্তির কম্য কারোরই কাম্য নয়।
দুই দেশকেই বিষয়টিকে বুঝতে হবে।
আজ দুই দেশের যারাই মৃত্যু বরণ করেছে, তাদের পরিবার উপলব্ধি করতে পারছে হারানোর ব্যথা, তারা তাদের পরিবারের যাকে হারিয়েছে, তারা তাকে ার ফিরে পাবে না।
এমনি ভাবে যদি আরো প্রাণ হারায় তা হলে এর অপূর্ণতা শুধু তাদের পরিবারেরই হবে না, হবে দেশেরও।কারণ যে সৈন্যটি মারা যায়, তাকে তৈরি হতে এবং দেশের সরকারের অনেক কিছুর বিনিময়ে করতে হয়।
তাই আমরা যুদ্ধ নয়,আমরা শান্তি চাই।
ওয়ার্ল্ড খবর২৪