নিজস্ব সংবাদাতা:
কুমিল্লায় দিনের বেলায় সড়কের পাশে ফিল্মি স্টাইলে হেলমেট পরা দুর্বৃত্তরা সশস্ত্র অবস্থায় সাতটি মোটর সাইকেলে এসে গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা করেছে নগরীর ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের যুবলীগের কর্মী জিল্লুর রহমান চৌধুরী ওরফে গোলাম জিলানীকে।
গতকাল সকাল ৭টার দিকে কুমিল্লা নগরীর চৌয়ারা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। যুবলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনে কর্মী খুনের ঘটনায় নগরীজুড়ে চলছে নানা আলোচনা।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সকাল ৭টার দিকে জেলার সদর দক্ষিণ উপজেলার চৌয়ারা গ্রাম থেকে স্ত্রীকে পাশের তারাপাইয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পৌঁছে দিতে যান গোলাম জিলানী। এ সময় চৌয়ারা পুরাতন সড়কে সাতটি মোটরসাইকেলে থাকা অস্ত্রধারী ১৪ জন তাকে ঘিরে ধরে। তারা প্রথমে তার পায়ে গুলি করে। গুলিবিদ্ধ জিল্লুর মাটিতে পড়ে গেলে তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করা হয়। এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, একই রকম পোশাক ও মাথায় হেলমেট পরা একদল মোটরসাইকেল আরোহী রাস্তার ওপর দাঁড়িয়ে থাকা গোলাম জিলানীকে প্রথমে গুলি করে। তখন তিনি মাটিতে পড়ে যান। দুর্বৃত্তদের সঙ্গে একটি বস্তায় অনেকগুলো রামদা ছিল। মাটিতে লুটিয়ে পড়া গুলিবিদ্ধ গোলাম জিলানীকে রামদা দিয়ে কোপাতে থাকে দুর্বৃত্তরা। একটি কোপ গোলাম জিলানীর কোমর ও পেটে লাগে। এ সময় গোলাম জিলানী হামলাকারীদের অনুরোধ করেন তাকে না কোপানোর জন্য। হামলাকারীরা চলে যাওয়ার পর তার স্ত্রী জাহানারা আক্তার নগরীর মনোহরপুরের বাসা থেকে ঘটনাস্থলে আসেন। স্ত্রী এসে দেখেন গোলাম জিলানী মৃত্যুযন্ত্রণায় ছটফট করছেন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় জাহানারা আক্তার স্থানীয় বাসিন্দাদের সহযোগিতায় স্বামী গোলাম জিলানীকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সকাল ৯টায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান জিলানী।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বিগত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ২৫ নম্বর ওয়ার্ড থেকে কাউন্সিলর নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন গোলাম জিলানী।
নিহত জিলানীর ভাই অহিদুর রহমান জানান, গরুর বাজার দখল ও রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. আবুল হাসান ও তার ভাই হোসেনসহ অন্যরা এ হত্যাকান্ড ঘটিয়েছেন। বেশ কিছুদিন ধরে গোলাম জিলানী এবং ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হাসানের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে আসছিল। নিহত জিলানীর মা অশীতিপর ফেরদৌসী বেগম কাঁপা কাঁপা গলায় বলেন, তার চার ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে গোলাম জিলানী তৃতীয়।
সকালে বউকে তার কর্মস্থল স্কুলে পৌঁছে দিতে যাওয়ার সময় এই ঘটনাটি ঘটে।
নিহত জিলানীর তিন ছেলে। বড় ছেলে রায়হান চৌধুরী কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের একাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র। মেজো ছেলে রোদেয়ান চৌধুরী একটি মাদ্রাসায় পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। আর ছোট ছেলে রাফসান চৌধুরীর বয়স মাত্র পাঁচ বছর।
বাবাকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ বড় ছেলে রায়হান চৌধুরী। একটু স্বাভাবিক হয়ে বলেন, ‘রাজনীতি করার কারণে আমার বাবাকে হত্যা করা হয়েছে। আমরা এখন নিরাপত্তাহীনতায় আছি।’